কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধনের নামে মিথ্যাচার করেছে: কুবি শিক্ষক

কুবি প্রতিনিধি।।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ মানববন্ধনের নামে মিথ্যাচার করেছে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু তাহের। ২৪ আগস্ট (বুধাবার) শিক্ষক লাউঞ্জে বঙ্গবন্ধু পরিষদের (সাইদুল-খলিলুর) ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এসময় তিনি মিথ্যাচারের সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। এদিকে ড. তাহেরের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগে নিন্দা জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাংশ। এছাড়া শিক্ষককে নিয়ে মিথ্যা মন্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তিন দিনের আল্টিমেটাম প্রদান করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে ড. আবু তাহের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ৭ আগস্ট চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী জসিম উদ্দিন কর্তৃক হুমকি, ধমকি এবং চাপ প্রয়োগের অভিযোগ করে কিছু কর্মচারী। তাদের কথার প্রেক্ষিতে জসিমকে কিছু উপদেশমূলক কথা বলি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ভাতৃপ্রতীম, সৌহার্দপূর্ণ এবং স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে অনেকটা অধিকারবোধের জায়গা থেকে বলি। কিন্তু আমার অনুমতি না নিয়ে সে কথোপকথন রেকর্ড করে গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়। কর্মচারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপাচার্য আমাকে ডেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চায় এবং বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন। কিন্তু একই সময়ে উপাচার্যের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে কিছু সংখ্যক কর্মচারী-কর্মকর্তা মানববন্ধনের নামে মিথ্যাচার করে দেশ ও জাতির সামনে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে। যেটি গর্হিত অপরাধ বলে আমি মনে করিনি।

তারা আরও বলেন, তারা আমাকে জামাত-শিবিরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের একজন সদস্য এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের প্যানেল নীল দল থেকে দুই বারের শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হই। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, প্রগতিশীল চিন্তা চেতনায় বিশ্বাস করি। আমি কখনোই জামাত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতা করি নাই, করিনা, এটা আমার আদর্শের পরিপন্থী।

জামাত-বিএনপির লোক নিয়োগের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগগুলো একটি বাছাই বোর্ডের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে, সেখানে ৫-৬ জন সদস্য থাকেন। আমি কয়েকটি নিয়োগবোর্ডের একজন সদস্য ছিলাম মাত্র। জামাত-শিবির কিংবা বিএনপি’র প্রার্থী নিয়োগদানের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট।

সোলার ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ দিয়ে তারা মিথ্যাচার করছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সোলার ক্রয় দুর্নীতির অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যাচার, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন তথ্য। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেসময় গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের আমি সদস্য ছিলাম মাত্র। বিশেষজ্ঞ সদস্যবৃন্দ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মান সম্পন্ন সোলার আইটেম নির্বাচন করেছেন এবং ইনস্টলেশনে সহযোগিতা করেছেন। কাজেই এ নিয়ে কোন দুর্নীতি হয়েছে কিনা এ বিষয়ে আমার জানা নাই। এ বিষয়ে প্রকৌশল দপ্তর কিংবা পরিকল্পনা দপ্তর বলতে পারবেন। এখানেও আমাকে জড়িয়ে যে মিথ্যাচার করা হয়েছে আমি তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

ড. তাহের বলেন, মানববন্ধনে বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য ও বক্তব্য উপস্থাপন করে দেশ ও জাতির সামনে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমার ব্যক্তিগত, পেশাগত ও সামাজিক মান মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। আমি মনে করি এধরণের মিথ্যাচারের মাধ্যমে গোটা শিক্ষক সমাজকেই কলংকিত করা হয়েছে। কর্মচারীদের এমন আচরণ ধৃষ্টতা ও ঔদ্ধত্যের শামিল। এসময় তিনি এসব কর্মকান্ডে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী, সাধারণ সম্পাদক ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম, বঙ্গবন্ধু পরিষদ একাংশের সভাপতি সাইদুল আল আমিন, সাধারণ সম্পাদক ড. খলিলুর রহমানসহ শিক্ষক সমিতির সদস্যবৃন্দসহ ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ একাংশের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে ড. তাহেরের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা বক্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা জড়িতদের দৃষ্টামূলক শাস্তির দাবি জানান। এসময় তারা তিন দিনের আল্টিমেটাম দেন।

উল্লেখ্য, কর্মচারী সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিনকে হুমকির প্রতিবাদে গত ২৩ আগস্ট মানববন্ধন করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ।