অটোতে ব্যাগ ভর্তি ১৫ লক্ষ টাকা পেয়েও বাবার নির্দেশে ফেরৎ দিলেন চালক অনিক হাসান

চলতে চলতে পেয়ে গেলেন নিজের অটো রিক্সায় যাত্রীর ফেলে যাওয়া ব্যাগ ভর্তি টাকা। গুনে গুনে দেখা গেল এতে ১৫ লক্ষ টাকার মতো আছে। দেখে যে কেহ লোভে পড়া সহজ, তবে কুমিল্লার তরুণ অটোচালক অনিক হাসান সে লোভ না পরে সততার পরিচয় দিলেন। বাবার শেখানো সততার শিক্ষা তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছে জীবনের অন্যতম বড় পরীক্ষায়।

ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লা নগরীর রাজগঞ্জ এলাকায়। অনিক প্রতিদিনের মতো গত শনিবার সকালে যাত্রী পরিবহন করছিলেন। সকাল ১০টার দিকে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি রাজগঞ্জ বাজার থেকে গোমতী পার হাইওয়ের দিকে একটি ব্যাগসহ অটোতে ওঠেন। গন্তব্যে পৌঁছে তাড়াহুড়ো করে নেমে পড়েন তিনি। কিছুক্ষণ পর অনিক লক্ষ্য করেন, তাঁর অটোর সিটে একটি কালো ব্যাগ পড়ে আছে।

বিষয়টি প্রথমে বুঝে উঠতে না পারলেও, ব্যাগ খুলে দেখে তাঁর চোখ কপালে। ভেতরে গাদাগাদি করে রাখা টাকার বান্ডিল। পরে টাকাগুলো গুনে দেখা যায় প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার মতো রয়েছে।

বাড়িতে ফিরে বাবার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন অনিক। অনিকের বাবা আব্দুল হাকিম পেশায় একজন হোসিয়ারি কারখানার শ্রমিক। তিনি ছেলেকে স্পষ্ট বলেন, “লোভে পাপ, পাপে সর্বনাশ। এটা তো তোমার টাকা না, ফেরৎ দিয়ে দাও।”

বাবার কথাতেই সাহস পান অনিক। এর পর তিনি ব্যাগে থাকা কিছু কাগজ ও একটি ডায়েরির সূত্র ধরে মালিকের নাম ও মোবাইল নম্বর খুঁজে বের করেন। পরে যোগাযোগ করে ব্যাগটি স্বজনদের মাধ্যমে ফিরিয়ে দেন।

ব্যাগের মালিক আবদুস সালাম ঢাকায় একটি বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম সব শেষ। এমন টাকা কেউ ফেরৎ দেয়, এটা ভাবিনি। অনিকের মতো ছেলে সত্যিই সমাজের জন্য উদাহরণ।”

অনিক হাসান বলেন, “আমরা গরিব, কিন্তু হারাম টাকা দিয়ে সুখী হওয়া যায় না। বাবা ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন—সততাই বড় সম্পদ।”

এই ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় মানুষজন অনিকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। কেউ কেউ পুরস্কার দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তাকে।

সততার এমন দৃষ্টান্ত যেখানে প্রায়শই হারিয়ে যায়, সেখানে অনিক হাসান যেন এক নির্মল বাতাসের ঝাপটা।