সাবরিনায় ফের আলোচনায় কুবির সমাবর্তন
নাজমুল সবুজ,কুবি।।
আশ্বাস দিয়েও আর্টিফিশিয়াল ফটক না করা, ভুলে ভরা সনদপত্র, নিম্নমানের খাবার এবং নানা অব্যবস্থাপনা নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের(কুবি) ১ম সমাবর্তন শেষ হয় গত জানুয়ারি মাসে। দীর্ঘদিন সবাই বিষয়টি ভুলে ছিলেন। তবে সম্প্রতি করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার ঘটনায় সমালোচিত জেকেজি হেলথ কেয়ার ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ওভাল গ্রুপের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী আটক হওয়ার পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে উঠানো তার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ সমাবর্তনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিল ওভাল গ্রুপ। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সমাবর্তনে ওভাল গ্রুপের কাজের মান এবং সেখানে কোন দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দাবি, কিভাবে এমন একটি দুর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠান সমাবর্তনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পেয়েছিল তাও খতিয়ে দেখা দরকার।
প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৩ বছর পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়, সেই সমাবর্তনের ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্টের দায়িত্ব পায় ওভাল গ্রুপ লিমিটেউ। করোনা পরীক্ষা নিয়ে ডা. সাবরিনা এবং তার স্বামী আরিফের প্রতারণা সামনে আসার পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের কনসার্ট চলাকালীন সময়ে সামনের সারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিদের সাথে বসা ডা. সাবরিনার একটি ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার শুরু হয়। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষককে পিছনের সারিতে বসতে হলেও ডা. সাবরিনার প্রথম সারিতে বসা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে জয়নাল আবেদিন নামের এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, ‘সাবরিনা আপা আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল। আমাদের মহামান্য ভিসি স্যারের সাথে সামনের কাতারে বসেছিল অথচ অনেক শিক্ষক বসতে পারিনি, গাদাগাদি করে বসেছিল। সাবরিনা আপা নাকি থ্রিডি প্রেজেন্টেশনও দিয়েছিল এবং ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্টের দায়িত্ব নাকি পেয়েছিল। আল্লাহ-মালুম এখানে কত টাকার লেনদেন হয়েছে, কত টাকায় কার পকেট ভারি হয়েছে। সাবরিনা আপা মনোরম চমকদায়ক মন ভোলানো কথা বলে কত টাকা মানে কত লাখ টাকা নিয়ে গেছে আল্লাহ জানে।’
কামরুল হাসান নামের একজন বলেন, ‘ এটা কি সিনিয়র শিক্ষকদের জন্য অপমানজনক নয়? তেলবাজরা কি আদৌ লজ্জ্বা বোধ করছেন?’
রাসেল রাফি বলেন, ‘ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে মাননীয় ভিসি স্যারের পাশে সামনের সারিতে এসব ডাক্তার নামের নরপিচাশদের দেখেও আমি বিন্দুমাত্র লজ্জিত হই না। কারণ এদেশে আরোও বড় বড় রাঘব বোয়ালদের সাথে চলাফেরা আছে তা না হলে সামনের সারিতে জায়গা পাওয়ার কথা না।’
সেসময় সমাবর্তনে তাদের কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে একটি দৃষ্টিনন্দন আর্টিফিশিয়াল ফটক করার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে কয়েকটি ব্যানার লাগিয়ে সে দায় সারে ওভাল গ্রুপ লিমিটেড। এসব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯œাতকত্তোরের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম হানিফ বলেন, সমাবর্তনের মতো এত বড় অনুষ্ঠানে সাবরিনার মতো নষ্টরা অতিথি হিসেবে থাকা এবং তার স্বামী আরিফের মতো দুর্নীতিবাজ ইভেন্টের কাজ করা খুবই দুঃখজনক। স্পষ্টত, অবৈধভাবে ও ইভেন্টের জন্য আলাদা কমিটি হলেও স্বেচ্ছাচারিতার ভিত্তিতে এই ইভেন্টের কাজ তাকে দেয়া হয়েছিল। তাদের পিছনে কারা ছিল,তাদের বাইর করা দরকার। আর কর্তৃপক্ষ, যেভাবে সমাবর্তন আয়োজনের কথা ছিলো,তার ধারেকাছেও ছিলো না,অর্থাৎ ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছিলো। তদন্ত করে, দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করা হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হাসান মোহাম্মদ মাহাদী বলেন, ‘এটি এখন দিনের আলোর ন্যায় সত্য যে ব্যক্তিগত চরিতার্থ সাধনের জন্য আমরা অনেক সময় চোর ও দুর্নীতিবাজদের কাজ পাইয়ে দেই। এতে করে লাভের অংশের ভাগও পাওয়া যায় বলে শোনা যায়। আর একদল চাটুকার থাকে যারা সামান্য লাভের আশায় এসব খারাপ মানুষদের গুণগান গায়। ডাঃ সাবরিনা গ্রেফতারের পর তার স্বামী আরিফের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর কাজ পাওয়া নিয়ে গতকাল থেকে নানান প্রশ্ন ও দুর্নীতির সন্দেহ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সত্য-মিথ্যা নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে বের হবে তাই আগাম কোন রায় বা মন্তব্য করতে চাইনা। তাছাড়া একজন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তি সমাবর্তনে মাননীয় উপাচার্যের পাশে বসে গান শোনাটাও দৃষ্টিকটু বলেছেন। তাছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেক সময় শিক্ষকদের পেছনের সারিতে বসা বা দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে হয় যা শিক্ষার্থীদের বিব্রত করে। রানী গোলাপি রং এর শাড়ি বা মানুষের বাহ্যিকরূপ দেখে মুগ্ধ না হয়ে মানুষের আমলনামার খবর নেয়া জরুরী কোন কিছুতে সম্পৃক্ত বা কাজ পাইয়ে দেবার আগে। আর মানুষ চিনতে ভুল করলে বা ইচ্ছেকরে ভুলে পা বাড়ালে, গোটা সমাজ তার খেসারত দিতে হয়।’
এ বিষয়ে সমাবর্তনের প্যান্ডেল প্রস্তুত ও আসন ব্যবস্থাপনা উপকমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘ ওভাল গ্রুপকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই কাজ দেওয়া হয়েছিলো। একটি আর্টিফিশিয়াল ফটক নির্মাণের কথা থাকলেও সেটা যথাযথভাবে করতে পারে নাই। তবে তারা যে কাজগুলো সম্পূর্ণভাবে করতে পারে নাই সে কাজগুলোর অর্থ তাদের দেওয়াও হয়নি। তারা চেষ্টা করেছিলো এসব ধামাচাপা দেওয়ার জন্য, তবে আমাদের ভিজিলেন্সের জন্য তারা পারে নাই।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, ‘ ওভালগ্রুপ লিমিটেড আমাদের এখানে ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্টের কাজ করেছিলো, তাদের একটি আর্টিফিশিয়াল ফটকসহ বেশ কিছু কাজ করার কথা থাকলেও তারা সময় স্বল্পতার অযুহাতে সেগুলো যথাযথভাবে করেনি। কার্যাদেশ অনুযায়ী তারা যে কাজগুলো করে নাই সেগুলোর অর্থ তাদের দেওয়া হয় নাই। সাজসজ্জ্বাসহ এসব কাজ করার জন্য যে কমিটি ছিলো তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ওভালগ্রুপ শুধু যতটুকু কাজ করছে ততটুকুর অর্থই প্রদান করা হয়েছে। যে কাজগুলো তারা করেনি তার অর্থ দেওয়া হয়নি। ওভালগ্রুপের এ কাজের কিছু অর্থ এখনো প্রদান করা হয় নাই। এবিষয়ে অনিয়ম হওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে সংশ্লিষ্ট কমিটি আরো বিস্তারিত বলতে পারবে।’
(বিঃদ্রঃ-আমাদের পোর্টাল থেকে নিউজ কপি করবেন না, আমাদের নিউজ কপি করে যে সমস্ত পোর্টালে প্রকাশ করছেন, সে নিউজের স্ক্রিনশট রাখা হচ্ছে। কপি করা বন্ধ না করলে আপনার নিউজ পোর্টালের নাম এবং স্ক্রিনশটসহ প্রকাশ করা হবে)