কুসিক নির্বাচন: শিক্ষায় পিছিয়ে, সম্পদে শীর্ষে সাক্কু

নাজমুল সবুজ।।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নির্বাচনে অংশ নেয়া ছয় প্রার্থীর মধ্যে এই সিটির দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর শিক্ষাগত যোগ্যতা সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছেন। হলফনামায় তিনি এসএসসি পাস করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। তবে শিক্ষায় পিছিয়ে থাকলেও সম্পদে তিনি শীর্ষে রয়েছেন।

বাকী ৫ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইমরানের বিএসএস, স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বিকম পাস। ইসলামী আন্দোলনের মো: রাশেদুল ইসলাম কামিল পাস।

স্থাবর, অস্থাবর, বাণিজ্যিক ও কৃষি জমি মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তি রয়েছে মনিরুল হক সাক্কুর। সাক্কুর নগদ টাকার পরিমাণ ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯২। সাক্কুর স্ত্রীর নগদ টাকা রয়েছে ৯৯ লাখ ১৩ হাজার ৮২০ টাকা। সাক্কুর ব্যাংকে জমা ২ লাখ ৯৪ হাজার, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৭৫৭ টাকা। বন্ড রয়েছে দুই লক্ষ টাকার। নিজের নামে স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৫০ লাখ ও স্ত্রীর বিনিয়োগ রয়েছে ৩৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। সাক্কুর নিজের নামে একটি ল্যান্ডক্রুজার জিপ ও স্ত্রীর নামে একটি জিপগাড়ি আছে। সাক্কু ও তার স্ত্রী দুইজনেরই স্বর্ণ আছে এক লাখ টাকা সমমূল্যের। সাক্কুর ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম আছে ৪৭ হাজার ও আসবাবপত্র ১ লাখ টাকার। সাক্কুর লালমাইয়ে ২৫০ শতাংশ ও মনোহরগঞ্জের শরীফপুরে ২০ একর কৃষি জমি রয়েছে। স্ত্রীর নামে গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে কৃষি জমি আছে ১ একরের বেশি। সাক্কুর ঢাকায়, কুমিল্লায় নিজের নামে ফ্ল্যাট ও দোকান আছে। এছাড়া স্ত্রীর নামে বসুন্ধরায় তিন কাঠা জমি, সাক্কুর নিজের স্বদেশ প্রপার্টিজে পাঁচ কাঠা জমি, বসুন্ধরায় তিন কাঠা, ১৭ শতাংশের নির্মাণাধীন ভবন, ফাতেমা জাহানার টাওয়ারে ৫ টি দোকান আছে। সাক্কুর বিরুদ্ধে বর্তমানে দুইটি ফৌজদারি মামলা চলমান আছে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় ১০ হাজার, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান ও অন্যান্য ভাড়া বাবদ আয় ৫ লাখ, ব্যবসায় ১৭ লাখ ১১ হাজার ৮০০, রিফাতের ওপর নির্ভরশীলদের আয় চার লাখ ৬৬ হাজার ৭৬২ ও সুদ বাবদ আয় তিন লাখ তিন হাজার ৯৫ টাকা। রিফাতের ব্যাংকে জমা আছে ছয় লাখ ১২ হাজার ও স্ত্রীর নামে জমা রয়েছে ৩৩ হাজার টাকা। পোস্টাল সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় আছে ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৪ টাকা। রিফাতের কোটি টাকা মূল্যের একটি ও ২০ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপগাড়ি আছে। স্বামী-স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার আছে ৫০ ভরি। তাদের ইলেকট্রনিক সামগ্রী আছে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা সমমূল্যের। আসবাবপত্র আছে তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকার। রিফাতের ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি, তার স্ত্রীর ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি আছে। যৌথ মালিকানায় ৩০ লাখ টাকার সম্পত্তি আছে ফেনী গ্রান্ড টাওয়ারে। ঢাকা ও কুমিল্লায় ৭০ লাখ টাকা মূল্যের দুইটি অ্যাপার্টমেন্ট আছে তার।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান ইমরানের কৃষিখাত থেকে বাৎসরিক আয় ২০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে আয় ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সুদ থেকে আয় আট হাজার ও প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীলদের সুদ থেকে আয় সাত লাখ ৮০ হাজার টাকা। তার নগদ টাকার পরিমাণ দুই লাখ ৪২ হাজার ৭৪২ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা তিন লাখ ১৭ হাজার ও তার স্ত্রীর জমা সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার ও তার স্ত্রীর যথাক্রমে ৫২ লাখ ও ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের দুইটি গাড়ি আছে। তার ও তার স্ত্রীর ৭৫ তোলা স্বর্ণালঙ্কার আছে। আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী আছে চার লাখ টাকা মূল্যের। কৃষি জমি আছে প্রায় ৭৮ শতাংশ, ঢাকায় ২৫ লাখ টাকার ফ্ল্যাট ও লালমাইয়ে ১.১২ একর জায়গা রয়েছে তার। তার বিরুদ্ধে দুইটি ফৌজদারি মামলা চলমান রয়েছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারের চাকরি থেকে বাৎসরিক আয় ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা, তার নগদ রয়েছে ৩৮ লাখ ৭২ হাজার ৯৩৫ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ৩ লাখ ২ হাজার ও শেয়ার আছে ৪০ হাজার টাকার। তিনি ও তার স্ত্রীর মিলিয়ে স্বর্ণালঙ্কার আছে ৫০ তোলা। তাদের ৮ লাখ টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও আসবাবপত্র রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আটটি ফৌজদারি মামলা চলমান রয়েছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুলের ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় আড়াই লাখ টাকা। নগদ টাকা আছে তিন লাখ ২০ হাজার। বিয়ের উপহারস্বরূপ স্বর্ণ আছে ৩০ ভরি ও প্রায় তিন লাখ টাকার অন্যান্য সামগ্রী আছে তার। তার তিন লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যে অকৃষি জমি আছে। এছাড়াও ১৭৬ শতাংশ তিনি ও ১৯৬ শতাংশ জায়গায় তার ওপর নির্ভরশীলদের ভবন তৈরি হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে দুইটি ফৌজদারি মামলা চলমান।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী রাশেদুল ইসলামের বাৎসরিক আয় তিন লাখ ১৮ হাজার টাকা। তার বাসায় সামান্য কিছু আসবাবপত্র আছে। তার ৮.২৫ শতাংশ অকৃষি জমি ও একটি বাড়ি আছে। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।